শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তির প্রাথমিক কার্যক্রম সমূহ
একটি জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে শিক্ষা যা মানুষের জ্ঞান,ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তাধারাকে বিকশিত করার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যায়।একমাত্র শিক্ষাই ব্যক্তির সাফল্য ও উন্নতির অন্যতম একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় আর ব্যক্তির উন্নতির ফলেই দেশ সমাজ ও জাতির উন্নতি সাধন সম্ভবপর হয়ে উঠে। এই বিষয়গুলা গভীরভাবে উপলব্ধি করার মধ্য দিয়েই মূলত শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তির যাত্রার সূচনা হয়। হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার দারিদ্র্য মেধাবী ও সম্ভাবনাময় বিশেষ সকল শিক্ষার্থীদের জন্য এই শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে ও সামাজিক দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উন্নতি করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। এই লেখাটির মাধ্যমে আমরা শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তির অগ্রগতির প্রাথমিক নির্বাচন থেকে শুরু করে লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করবো।

মেধা ও সম্ভাবনা চিন্হিতকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক নির্বাচন পর্ব:
শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তি প্রোগ্রামের প্রথম ধাপটি ছিলো প্রাথমিক নির্বাচন। প্রাথমিক নির্বাচনে শিক্ষার্থীদেরকে আবেদন করার মাধ্যমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা আবেদন ফরমে তাদের শিক্ষাগত অর্জন, সামাজিক দায়িত্বশীলতা,ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্য সম্পর্কে বিশদ বিবরণ প্রদানের মাধ্যমে আবেদন পত্রটি জমা দেন। প্রাথমিক নির্বাচনের এই বিষয়গুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, মেধা,সুন্দর মননশীলতা এবং সম্ভাবনাগুলোকে বের করে আনা সম্ভব। প্রাথমিক নির্বাচনের এই ধাপগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই সকল শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করা যায় যাদের জন্য এই বৃত্তিটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে। যাদের এই বৃত্তিটির অনেক প্রয়োজন এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিশীল ও সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে আগ্রহী তারাই এই বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবেন।

নির্বাচনী মানদণ্ড :
শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তির জন্য যোগ্য শিক্ষার্থী নির্বাচিত করতে বেশ কয়েকটি মানদণ্ড রাখা হয়।এই মানদন্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে তাদের একাডেমিক ফলাফল, মেধা,প্রতিভা,পাঠ্যবই বহির্ভূত কার্যক্রম, সামাজিক দায়িত্বশীলতা,সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালনে সচেষ্ট থাকা এবং আর্থিক প্রয়োজনীয়তা।এই মানদন্ডগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য যোগ্য শিক্ষার্থী যাচাইয়ের ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হয়। শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্রগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয় এবং বিভিন্ন পটভূমি থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ দেওয়া হয়।
ফিল্টারিং বা স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া :
প্রাথমিক নির্বাচন শেষে একটি তালিকা তৈরি করা হয় যারা কিনা প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রাথমিক মানদন্ডের ভিত্তিতে শিক্ষাবৃত্তির জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।এবার আরো গভীরভাবে নিরীক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করা হয় যেটাকে আমরা এককথায় ফিল্টারিং বা স্ক্রিনিং বলছি।এই পর্বে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক রেকর্ড, ব্যক্তিগত বিবৃতি এবং উল্লিখিত মানদন্ডগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাচাই বাচাই করা হয়। শুধুমাত্র মেধাবীই নয় বরং সামজিক ইতিবাচকতা ও নেতৃত্বদানে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকেও প্রাধান্য প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে এমন সকল শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে যারা সত্যিই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
পটভূমি যাচাইকরণ :
স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পটভূমি যাচাইকরণ। শিক্ষার্থীদের রেফারেন্স চেক,পূর্ববর্তী একাডেমিক অর্জন সমূহ ও পরিচয় যাচাই-বাছাইকরণ করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।

সাক্ষাৎকার পর্ব :
স্ক্রিনিং বা ফিল্টারিং প্রক্রিয়ার যাচাইকরণের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের জন্য আহ্বান করা হয়। এই সাক্ষাৎকার পর্বটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচয় সামাজিক অবদান এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর রাখা হয়।শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তির কমিটি এই পর্বে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক উভয় দিকসহ অর্থনৈতিক দিকও সরাসরি মূল্যায়ন করে থাকে। এটি মূলত শিক্ষার্থীদেরকে আরো গভীরভাবে জানার ও বোঝার জন্য সহজ হয়। তাদের স্বপ্ন ও স্বপ্নযাত্রাকে সহজ করতে এই শিক্ষাবৃত্তি কিভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে সে সম্পর্কে আলোচনা করতে পারেন। এর মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিত্বের গভীরতর দিক, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্যশক্তির বিষয়গুলো ফুটে ওঠে। শিক্ষাবৃত্তির কমিটি তাদের প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, সমাজের প্রতি তাদের সকল দায়িত্ব ও উদ্দেশ্য এবং একাডেমিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় বা মূল্যায়ন করা যায়।

লিখিত পরীক্ষা :
শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তি প্রোগ্রামের অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক পর্বটি হলো লিখিত পরীক্ষা। এটি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান এবং সমালোচনামূলক চিন্তার ক্ষমতা পরীক্ষা করে।শিক্ষার্থীদের জ্ঞান এবং দক্ষতা যাচাই করতে এই পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের একাডেমিক যোগ্যতা এবং মেধার সঠিক যাচাইয়ের ধাপটি সম্পন্ন হয়।

পরীক্ষার কাঠামো বিন্যাস :
লিখিত পরীক্ষায় বিষয়গুলো হলো গণিত, ইংরেজি, বাংলা এবং সাধারণ জ্ঞান।মোট ৫০ নাম্বারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তন্মধ্যে গণিতে ১৫ নাম্বার, ইংরেজিতে ১৫ নাম্বার, বাংলায় ১০ নাম্বার এবং সাধারণ জ্ঞানে ১০ নাম্বারের প্রশ্ন করা হয়। পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল যা শিক্ষার্থীদের চিন্তার গভীরতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং বিশ্লেষণী দক্ষতা পরীক্ষিত হয়। এর ফলে শুধুমাত্র সেরা শিক্ষার্থীরাই পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাবে।
ফলাফল ও পরবর্তী পদক্ষেপ:
লিখিত পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীরা এখন ফলাফলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তির কমিটি সঠিকভাবে সকলের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবে এবং ফলাফল ঘোষণা করবে। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও সফল হবে তাদেরকে পরবর্তী পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। এই পর্বটি তাদের শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার জন্য আরেক ধাপ কাছে নিয়ে যাবে।
উপসংহার :
শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তি প্রোগ্রামের এই যাত্রায় প্রাথমিক নির্বাচন থেকে লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিভাবান শিক্ষার্থী ও সম্মানিত শিক্ষকদের সমর্থন ও সহযোগিতার এক আদর্শ উদাহরণ। এই শিক্ষাবৃত্তিটি শিক্ষার্থীদের জন্য শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তাই নয় বরং শিক্ষার্থীদের শত আশায় লালিত সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি প্ল্যাটফর্ম।শিক্ষার্থীদের মনোবল ও অধ্যবসায় দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি এবং তারাই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আগামী কয়েকবছর পর যখন এই একজন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠিত হয়ে আরো একজন বা কয়েকজন অসহায় শিক্ষার্থীর হাত ধরবেন সমাজ তখন ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে, সকলের মনমানসিকতাই অন্যরকম হয়ে যাবে অপরের কল্যাণেই যেনো সুখ খুঁজে পাবে সকলেই। সমাজ ও জাতির উন্নয়নের এই যাত্রায় শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ ।